BCC Material – ডিজিটাল সাক্ষরতা ও অনলাইন নিরাপত্তা

একটি সাধারণ কর্মব্যস্ত দিন। হঠাৎ, জনপ্রিয় একজন সেলেব্রিটি সাংবাদিকের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ঘটে গেল অদ্ভুত কিছু। কিছুই বুঝে উঠার আগেই তার—ব্যক্তিগত ছবি, ভিডিও একে একে বিকৃত হয়ে শেয়ার হতে লাগল। বুঝতে পারলেন তার অ্যাকাউন্ট হ্যাক হয়েছে। ব্যাপারগুলো লক্ষ করে অনেকটা ঘাবড়ে গেলেন। পরক্ষনেই, মুঠোফোনে ম্যাসেজ আসল, উক্ত অ্যাকাউন্ট একজনের নিয়ন্ত্রণাধীন, মোটা অংকের টাকা না দিলে তিনি আরও ছবি বিকৃত করে সোশ্যাল মিডীয়ায় প্রচার করবেন।

এ কাজটি করেছিল মাহফুজুর রহমান নবীন নামের এক দুর্ধর্ষ সাইবার অপরাধী। পর্নোগ্রাফি ও রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির চরিত্র হননের মাধ্যমে সে অকল্পনীয় সব উপায়ে সাইবার অপরাধ ঘটান।

নবীন প্রথমে ফেসবুক আইডি হ্যাক করে ব্যক্তিগত ছবি ও ভিডিও সংগ্রহ করত। তারপর, সেসব প্রচার করে দিয়ে মোটা অংকের টাকা দাবি করত। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, নারী, মিডিয়াকর্মী, সেলিব্রেটি, এমনকি সাধারণ মানুষও তার শিকার হয়েছিলেন। ছবি বিকৃতি, ব্ল্যাকমেইলিং, ভুয়া ভিডিও (ডিপ ফেক) তৈরির মাধ্যমে সে মানুষেকে হয়রানি করত। দীর্ঘ অভিযান শেষে মাহফুজুর রহমান নবীনকে আটক করা হয়।

এ ধরণের ঘটনা থেকে স্বাভাবতই আমাদের মনে প্রশ্ন জাগে সাইবার নিরাপত্তা সম্পর্কে আমরা কতোটুকু সচেতন! আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত ইন্টারনেট, ডিজিটাল ডিভাইস, অনলাইন লেনদেন, ইন্টারনেট ব্যাংকিং, সোশ্যাল মিডিয়া এবং অনলাইনে শেয়ার করা ব্যক্তিগত তথ্য কতোটুকু সুরক্ষিত? আমাদের ব্যক্তিজীবনে কোন ধরণের হ্যাকিং বা সাইবার অপরাধের ঘটনা ঘটলে তা মোকাবেলা করবার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া এবং সাইবার অপরাধ থেকে নিজেকে সুরক্ষিত রাখবার জন্য প্রযুক্তিগত যে দক্ষতার এবং সচেতনতার প্রয়োজন সেটি কি আমরা সম্পূর্ণরুপে অর্জন করতে পেরেছি?

বাংলাদেশ সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশন (সিক্যাফ) প্রকাশিত ‘বাংলাদেশ সাইবার অপরাধপ্রবণতা-২০২৪’ প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, সাইবার আক্রমণের মূল শিকার মূলত ১৮ থেকে ৩০ বছর বয়সী তরুণেরা, যা মোট ভুক্তভোগীর ৭৮ দশমিক ৭৮ শতাংশ। তরুণ বয়সীদের মধ্যে মূল আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু নারী। সার্বিকভাবে আক্রান্তদের প্রায় ৬০ শতাংশই তরুণী।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ভুক্তভোগীদের ৭০ শতাংশই দেশের সাইবার আইন সম্পর্কে জানেন না। এই অসচেতনতা গত বছরের তুলনায় বেশি (প্রায় ৫৫ শতাংশ)

আপনি একজন শিক্ষার্থী, পেশাদার বা একজন গৃহিনী, যে’ই হোন না কেন, বর্তমান এবং ভবিষ্যত প্রযুক্তি নির্ভর বিশ্বে ডিজিটালি সাক্ষর ও সাইবার অপরাধ সম্পর্কে সচেতন থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ ওয়াবসাইট/অ্যাপ ব্যবহারের মাধ্যমে আমরা বিভিন্নভাবে ইন্টারনেটের সাথে সংযুক্ত থাকি। অনেক সময় নিজের অজান্তেই ভিবিন্ন ধরণের অনলাইন হয়রানি, বুলিং, এবং তথ্য চুরির সম্মুখীন হতে হয়।

তাই, ডিজিটাল টুলগুলো বোঝা এবং নিরাপদ ইন্টারনেট ব্যবহারের অভ্যাস অনুশীলন করা শুধু প্রযুক্তি-এক্সপার্ট ব্যক্তিদের জন্য নয়; আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর বিশ্বের সাথে নিজেকে প্রযুক্তি জ্ঞানে এগিয়ে রাখতে প্রত্যেক নাগরিকের জন্য এটি একটি মৌলিক দক্ষতা হওয়া উচিত।

স্মার্টফোন, কম্পিউটার, ইন্টারনেট ও অন্যান্য ডিজিটাল টুলস’কে কার্যকরভাবে ব্যবহার করার দক্ষতা, অনলাইনে সঠিক তথ্য খুঁজে বের করা এবং তার মূল্যায়ন করার মাধ্যমে ডিজিটাল ডিভাইসগুলি সঠিকভাবে ও নিরাপদে পরিচালনা করার প্রকৃয়া সম্পর্কে জানা ডিজিটাল সাক্ষরতার অন্তর্ভুক্ত।

ডিজিটাল সাক্ষরতার দক্ষতা কাজে লাগিয়ে সাইবার বুলিং, হ্যারেজমেন্ট, পরিচয় ও তথ্য চুরি এবং স্ক্যাম বা হ্যাকিং এর মতো সাইবার অপরাধ থেকে নিজেকে রক্ষা করার মাধ্যমে অনলাইনে নিরাপদ থাকা সম্ভব।

একটি জাতির জন্য যেকোনো সমস্যার সমাধান করতে হলে সুযোগের সদ্ব্যবহার ও সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হয়। সেইসাথে, সেখান থেকে প্রাপ্ত অর্জনকে টেকসই করা অপরিহার্য। এই লক্ষ্যে শতভাগ সাক্ষরতা অত্যন্ত জরুরি। একটি সাক্ষর জাতি সবসময় অন্যান্যদের থেকে এগিয়ে থাকে। বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিক মননে, মানে, গুণে ও ডিজিটালি সাক্ষর হোক।

– আজকের দিনে এটাই প্রত্যাশা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *