ব্লকচেইন টেকনোলজি

ব্লকচেইন টেকনোলজি ওয়েব ও ইন্টারনেট -এর মতো বা তার চেয়েও বেশি সম্ভাবনাময় একটি প্রযুক্তি ও প্লাটফর্ম!

সাধারণত কাগজের তৈরি প্রচলিত মুদ্রা বা এ সংশ্লিষ্ট কোন ডিজিটাল স্বাক্ষর সম্বলিত বস্তু ব্যবহার করে বাস্তব জীবনে এবং অনলাইনে লেনদেন সংক্রান্ত ব্যাপারগুলো আপাতঃ দৃষ্টিতে কোন প্রকারের সমস্যা ছাড়াই মিটিয়ে ফেলা যায়। তবে বর্তমানে ব্যবহৃত এটিএম কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ডেবিট কার্ড অথবা অন্য ডিজিটাল স্বাক্ষর সম্বলিত বস্তুগুলো ব্যবহারে দুটি বড় সমস্যা রয়েছে।

এসব লেনদেনের ক্ষেত্রে গ্রাহক ও গ্রহিতা উভয়কে তৃতীয় কোন পক্ষের উপর ‘ট্রাস্ট’ বা আস্থা রাখতে হয়, উদাহরণস্বরূপ ব্যাংক। তৃতীয় পক্ষ এই ব্যাংকে উভয় পক্ষ একটি নির্দিষ্ট পরিমাণের মুদ্রা পরিশোধ করে!

ইংরেজীতে ‘ডাবল স্পেন্ডিং’ বলে একটা বিষয় আছে, যা যেকোনো ই-ক্যাশ সিস্টেমের ফাঁক ফোঁকর দিয়ে ঢুকে যেতে পারে! ‘ডাবল স্পেন্ডিং’ হলো একই ই-ক্যাশ দুই বার বা তার বেশি ব্যবহার করা!

২০০৮ সালের অর্থনৈতিক মন্দার সময় পৃথিবীর সব বড় বড় ব্যাঙ্কগুলিও প্রায় পথে বসেছিল। অর্থাৎ সরকার বা থার্ড পার্টির নিরাপত্তা খুব কাজে আসছিল না। থার্ড পার্টি বা সরকারের উপর যখন বিশ্বাস করা কঠিন, তখন জনমনে হতাশা নেমে আসে!

উপরোক্ত সমস্যার সমাধানে সাতোশি নাকামোতো ছদ্মনামে এক বা একাধিক কম্পিউটার বিজ্ঞানী ২০০৮ সালের অক্টোবার মাসে ৯ পৃষ্ঠার “Bitcoin: A Peer-to-Peer Electronic Cash System” নামক এক গবেষণা প্রস্তাবনা অনলাইনে প্রকাশ করে। যেখানে প্রথম বিটকয়েন সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হয়। প্রস্তাবনার সারসংক্ষেপে বলা হয়, একটি পিয়ার-টু-পিয়ার (peer-to-peer) ইলেক্ট্রনিক মুদ্রা পরিশোধের ব্যবস্থা প্রয়োজন, যেটির মাধ্যমে একজন অন্যজনকে কোন তৃতীয় পক্ষ বা প্রতিষ্ঠানের কাছে না গিয়েই লেনদেন সম্পন্ন করতে পারবে। একই সঙ্গে ‘ডাবল স্পেন্ডিং’ থেকে বিরত থাকতে পারবে।

এই ব্যবস্থায় সব ধরনের লেনদেন সম্পন্ন হবে আস্থার পরিবর্তে ‘কাজের (লেনদেন) প্রমাণের’ ভিত্তিতে এবং সব ধরনের লেনদেন একটি নিদিষ্ট নেটওয়ার্কে লিপিবদ্ধ হবে। প্রস্তাবনা প্রকাশের পর থেকে সাতোশি বিটকয়েন ‘মাইনিং’ এর জন্য প্রথম সফটওয়্যার তৈরি করেনা। ‘মাইনিং’ হচ্ছে যে পদ্ধতিতে বিটকয়েন তৈরি করা হয়। ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে সাতোশি প্রথম বিটকয়েন মুদ্রা রিলিজ করে। এই সাতোশি নাকামোতোর আসল পরিচয় আজও অজানা।

২০০৯ সালে কিছু সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার মুক্ত উৎস প্রযুক্তিতে তৈরী করে ফেললেন পৃথিবীর প্রথম ক্রিপ্টোগ্রাফিক কারেন্সি বিটকয়েন। যা কোন সরকারের না। দেশের বাউন্ডারী মানে না। এর ভ্যালুয়েশন যারা ব্যবহার করছে এই কারেন্সি-তাদের কাছেই।

পিয়ার-টু-পিয়ার নেটওয়ার্ক হওয়ার কারণে বিটকয়েনের ট্রানজিকশন বা লেনদেন সেবা দাতা ও গ্রহিতার ‘ওয়ালেট’ থেকে ‘ওয়ালেটে’ সম্পন্ন হয়। ‘ওয়ালেটে’ বিটকয়েন সঞ্চিত রাখা থাকে। এটি অনলাইন বা অফলাইন দু’রকমেই হতে পারে। একজন বিটকয়েন ব্যবহারকারীকে দুটি ‘কি’ (Keys) ব্যবহার করতে হয়। একটি ‘পাবলিক কি’ (Public Key), এটি সবার জন্য উন্মুক্ত। অন্যটি ‘প্রাইভেট কি’ (Private key), এটি সর্বদা গোপন থাকে এবং লেনদেনের নিশ্চয়তার জন্য ব্যবহৃত হয়। ট্রানজিকশনের ইতিবৃত্ত একটি উম্মুক্ত খতিয়ানে (পাবলিক লেজার) রেকর্ড করা থাকে, যাকে ‘ব্লক চেইন’ (Block chain) বলে। এক্ষেত্রে ‘পাবলিক কি’ ব্যবহার করা হয় এবং একই লেনদেন একই ব্যবহারকারীর মাধ্যমে পুনরাবৃত্তি করা যায়না। ব্লকচেইনে সর্বপ্রথম ট্রানজিকশনের হিসাব থেকে আজ পর্যন্ত সব হিসাব সংরক্ষিত আছে এবং নিয়মিতভাবে আপডেট হচ্ছে।

বিটকয়েনের থেকেও গুরুত্বপূর্ন এর প্রযুক্তি ব্লকচেইন। যা শুধু কারেন্সি না-আইডেন্টি, রিয়াল এস্টেট রেজিস্ট্রেশন, গান, পেটেন্ট, সিনেমার কপিরাইট-মোদ্দা কথা “ওনারশিপ” বা মালিকানা বলতে যা বোঝায়, তাতে কাজে লাগানো যায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *