আপনার ISP জানে আপনি গতকাল রাতে কোন কোন ওয়েবসাইট ভিজিট করেছেন!

ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার (ISP) আপনার ইন্টারনেট ব্যবহারের প্যাটার্ন অ্যানালাইসিস করে অনেগুলো গুরুত্বপূর্ন তথ্য অ্যাক্সেস করতে পারে। যেমনঃ ওয়েবসাইট ভিজিট, সার্চ কোয়েরি(আনএঙ্ক্রিপ্টেড ব্রাউজিং এর ক্ষেত্রে), ডিভাইস তথ্য, ইনকামিং কল ও আউটগোয়িং কলের অবস্থান, টাইমস্ট্যাম্প এবং লোকেশন ডেটা সহ আরও গুরুত্বপূর্ন তথ্য পেতে পারে। প্রাপ্ত তথ্য থেকে ডেমোগ্রাফিক প্রোফাইল তৈরি করে টার্গেটেড অ্যাডভার্টাইজমেন্ট, অনলাইন মার্কেট ম্যানিপ্যুলেশন, ইউজার ইন্টারেস্ট যাচাই, এবং তৃতীয় পক্ষের কাছে, বিশেষ করে অ্যাডভার্টাইজমেন্ট কোম্পানির কাছে তথ্য গুলো বিক্রি করে দিতে পারে। (এ নিয়ে নিম্নে আরও বিষদ আলোচনা আছে)

এক্ষেত্রে VPN ব্যবহার করা সবচেয়ে সেইফ ব্রাউজিং পদ্ধতি, কারণ এটি ট্রাফিক এনক্রিপ্ট করে ISP-কে আপনার ব্রাউজিং ইনফরমেশন দেখতে বাধা দেয়। বাংলাদেশে সম্প্রতি Personal Data Protection Ordinance 2025 পাস হয়েছে, তবে সরকারি সংস্থাগুলোর নজরদারি ক্ষমতা এখনও বিস্তৃত।

এক নজরে এক্সেস করা তথ্যের ধরণ দেখে নেয়া যাক –

ডেটা টাইপISP কী দেখতে পারে
ওয়েবসাইট ভিজিটসমস্ত URL ও ডোমেইন
সার্চ কোয়েরিআপনি যা যা সার্চ করেন।
DNS রিকোয়েস্টপ্রতিটি ডোমেইন লুকআপ (যে ওয়েবসাইট গুলো ভিজিট করেন)
কানেকশন মেটাডেটাএকটি ওয়েবসাইট কতক্ষণ ধরে ব্যবহার করেছেন, কোন লোকেশন থেকে ব্যবহার করেছেন, এবং আপনার ব্যবহৃত ব্রাউজিং থেকে কতটুকু ব্যান্ডউইথ ব্যবহার করেছেন তার তথ্য।
ডিভাইস তথ্যMAC address, OS (আপনি যে অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করেন; যেমনঃ অ্যান্ড্রয়েড, উইন্ডোজ, অ্যাপল(আইফোন), ম্যাকবুক, লিন্যাক্স ইত্যাদি।
লোকেশনআনুমানিক অবস্থান(আইপি এড্রেস এর মাধ্যমে)

১. ব্যাখ্যা – ISP যেসকল ডেটা অ্যাক্সেস করতে পারে।

নেটওয়ার্ক ডেটা

ISP আপনার ইন্টারনেট সংযোগের “গেটকিপার” হিসেবে কাজ করে, যার ফলে আপনার সমস্ত ইন্টারনেট ট্রাফিক তাদের নেটওয়ার্কের মধ্য দিয়ে যায়। এই অবস্থানের কারণে ISP নিম্নলিখিত তথ্যগুলো সংগ্রহ করতে পারে:

IP Address: আপনার রাউটারকে অ্যাসাইন করা হয় পাবলিক IP(Internet Protocol) দিয়ে এবং সেই রাউটারে কানেক্ট করা প্রতিটি ডিভাইসের প্রাইভেট IP দেখতে পারে আপনার ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার। এই IP address ব্যবহার করে আপনার আনুমানিক লোকেশন অবস্থান নির্ণয় করা সম্ভব।

ওয়েবসাইট ভিজিট ও ব্রাউজিং হিস্ট্রি: আপনার ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার – DNS (Domain Name System) রিকোয়েস্টের মাধ্যমে আপনি কোন ওয়েবসাইট ভিজিট করছেন তা দেখতে পারে। এমনকি আপনি ব্রাউজার হিস্ট্রি ডিলিট করলেও অথবা Incognito মোডে ব্রাউজ করলেও ISP এই তথ্য দেখতে পায়।

সার্চ কোয়েরি: আপনার সার্চ ইঞ্জিনে টাইপ করা প্রতিটি সার্চ টার্ম ISP ইন্টারসেপ্ট করতে পারে, এতে করে অনলাইনে আপনি কি খুঁজেন, আপনার আগ্রহ বা ইন্টারেস্ট বুঝতে পারে।

যোগাযোগ ও সেশন ডেটা

অনলাইন কমিউনিকেশন: ইমেইল, ইনস্ট্যান্ট মেসেজিং, এবং VoIP কলের মেটাডেটা (যেমন: ইনকামিং কল ও আউটগোয়িং কলের অবস্থান, টাইমস্ট্যাম্প) ISP দেখতে পারে। তবে এনক্রিপ্টেড কমিউনিকেশনের কন্টেন্ট সরাসরি পড়া সম্ভব হয় না (যেমনঃ হোয়াটসঅ্যাপ, সিগন্যাল, ইত্যাদি এন্ড টু এন্ড এনক্রিপ্টেড মেসেজিং অ্যাপ)।

কানেকশন টাইমস্ট্যাম্প: কখন আপনি ইন্টারনেটে সংযুক্ত হয়েছেন এবং কখন সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছেন তা ইউজার লগ থেকে দেখা যায়।

ব্যান্ডউইথ ব্যবহার: আপনি কতটা ডেটা আপলোড ও ডাউনলোড করছেন তা ট্র্যাক করা হয়, অনেক সময় এই তথ্য এবং নেটওয়ার্ক ম্যানেজমেন্টের জন্য ব্যবহৃত হয়। যেমন – আপনার রাউটারের স্পিড লিমিট করে দেয়া।

ডিভাইস ও অ্যাপ্লিকেশন তথ্য

ডিভাইস ইনফরমেশন: MAC address, ডিভাইস আইডেন্টিফায়ার, এবং অপারেটিং সিস্টেমের তথ্য সংগ্রহ করা হয়। আপনি যে অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করেন; যেমনঃ অ্যান্ড্রয়েড, উইন্ডোজ, অ্যাপল(আইফোন), ম্যাকবুক, লিন্যাক্স ইত্যাদি।

অ্যাপ ব্যবহারের ডেটা: কোন অ্যাপ বা সার্ভিস ব্যবহার করছেন এবং কতটুকু ডেটা কনজিউম করছেন তা ISP দেখতে পারে।

২. Deep Packet Inspection (DPI) বা উন্নত নেটওয়ার্ক মনিটরিং ও কন্ট্রোল প্রযুক্তি

Deep Packet Inspection হলো একটি অত্যাধুনিক ডেটা অ্যানালাইসিস কৌশল যা ISP-কে আপনার পুরো ব্রাউজিং ডেটার কন্টেন্ট অ্যানালাইসিস করতে সাহায্য করে। সাধারণ প্যাকেট ইন্সপেকশন শুধু হেডার তথ্য (সোর্স IP, ডেস্টিনেশন IP, পোর্ট নম্বর) দেখে, কিন্তু DPI ডেটার পে-লোড পর্যন্ত বিশ্লেষণ করে। চলুন আরেকটু সহজ করে বিষয়টা বোঝা যাক –

DPI হচ্ছে একটি নেটওয়ার্ক মনিটরিং ও কন্ট্রোল প্রযুক্তি, যেখানে ইন্টারনেট ডেটা শুধু প্যাকেটের হেডার নয়, ভিতরের কন্টেন্ট (payload) পর্যন্ত স্ক্যান ও বিশ্লেষণ করা হয়। সাধারণ নেটওয়ার্ক ফিল্টার শুধু দেখে – কোন IP, কোন পোর্টে ডেটা যাচ্ছে।
কিন্তু DPI দেখে – এই ডেটার ভেতরে কী আছে।

ধরা যাক একজন লোক পোস্ট অফিসে চিঠি পাঠাচ্ছে, এই চিটি খাম দিয়ে মোড়ানো। পোস্ট মাস্টার খামের ওপর নাম, ঠিকানা দেখল, দেখে বুঝলো চিঠিটি কার এবং কোথায় যাচ্ছে।

কিন্তু সেই পোস্টমাস্টার শুধু খামটি দেখে খ্যান্ত দেননি। তিনি তা খুলে চিঠির ভেতরে লেখা পড়ে ফেলল। আর এই বিষয়টাই হচ্ছে – DPI.

আপনি যে আইপি দিয়ে ইন্টারনেট ব্যবহার করছেন তা হচ্ছে আপনার চিঠির খামের উপরের অংশ যা দিয়ে আপনার পরিচয় সনাক্ত করা যায়। কিন্তু সেই আইপি ইন্সপেক্ট করে আপনার সকল হিস্ট্রি, কোন ওয়েবসাইট ব্রাউজ করছেন, কি সার্চ করছেন সব বের করার পদ্ধতি হচ্ছে – DPI.

DPI ব্যবহার করে ISP আপনি কোন অ্যাপ্লিকেশন (যেমন: Twitter, Facebook) ব্যবহার করছেন তা শনাক্ত করতে পারে এবং সেই ট্রাফিককে রিডাইরেক্ট বা ব্লক করতে পারে। এমনকি VPN ব্যবহার করলেও DPI কখনো কখনো VPN ট্রাফিক শনাক্ত করতে পারে। তবে এনক্রিপ্টেড কন্টেন্ট পড়তে পারে না।

আরও যেসব উদ্দ্যেশে DPI ব্যবহার করা হয়ঃ

  • নির্দিষ্ট ওয়েবসাইট/অ্যাপ ব্লক করা
  • VoIP/স্ট্রিমিং/টরেন্ট ট্রাফিক শনাক্ত করা
  • নির্দিষ্ট পেইজ/ফাইল/কন্টেন্ট ট্র্যাক করা
  • নেটওয়ার্কে ভাইরাস / ম্যালিশিয়াস ট্রাফিক শনাক্ত করা
  • ইউজারের ইন্টারনেট অ্যাক্টিভিটি পর্যবেক্ষণ করা

৩. ISP কীভাবে এই ডেটা ব্যবহার করে

বিজ্ঞাপন ও ডেটা মনিটাইজেশন

ISP মূলত ইউজার ডেটা থেকে “behavioral profiles” তৈরি করে যা বিজ্ঞাপনদাতাদের কাছে বিক্রি করা হয়। এই প্রোফাইলিংয়ে অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে:

  • ব্রাউজিং হিস্ট্রি।
  • ডেমোগ্রাফিক ডেটা।
  • অনলাইন পেমেন্ট ও বিভিন্ন সার্চ কোয়েরি।

২০১৭ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ISP-দের আইনত ইউজার ডেটা তৃতীয় পক্ষের কাছে বিক্রি করার অনুমতি রয়েছে (রেফারেন্স নিচে আছে)। বাংলাদেশের ISP দের জন্য এ ধরণের কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। বড় ISP-গুলো অনেক সময় “de-identified” ডেটা বিক্রির দাবি করলেও, ব্রাউজিং প্যাটার্ন থেকে ব্যবহারকারীদের পুনরায় আইডেন্টিফাই করা সম্ভব। এখানে de-identified ডেটা বলতে এমন ডেটা বোঝায় যেখানে ব্যক্তিকে সরাসরি শনাক্ত করার তথ্য (যেমন নাম, ফোন, ইমেইল, ঠিকানা, অ্যাকাউন্ট আইডি ইত্যাদি) বাদে শুধু মাত্র ব্রাউজিং ইন্টারেস্ট, সার্চ কোয়েরি, বয়স ইত্যাদিকে বোঝায়।

তবে সমস্যা কোথায়?

যদিও নাম বা ইমেইল সরাসরি এক্সেস করার সুযোগ থাকে না কিন্তু ব্রাউজিং প্যাটার্ন, অ্যাপ-ইউজ, লোকেশন, সময়সূচি মিলিয়ে একজন ব্যক্তিকে চিনে ফেলা সম্ভব। চলুন এরকম কয়েকটা প্যাটার্ন দেখিঃ

ইউজার (১) –

  • প্রতিদিন রাত ১০টায় PUBG খেলে
  • সকালে LinkedIn + 10 Minute School ব্রাউজ করে
  • দুপুরে Mirpur-এর এলাকায় থাকে(যেটা তার গুগোল এক্টিভিটিতে থাকে)
  • দিনে ২-৪ বার “Sad relationship quotes” সার্চ করেন

আমরা যদি এই ইউজারের জন্য একটা ডিসিশন তৈরি করি – এই ব্যক্তি একজন gamer, সে চাকরি / ক্যারিয়ার / স্কি ল ডেভেলপমেন্ট নিয়ে কাজ করছে, এবং দিনের অনেক সময় সে স্যাড থাকেন। এই তথ্য গুলোর উপর base করে এই ইউজারের ডিভাইস এবং তার সোশ্যাল মিডিয়া একাউন্ট গুলোতে এই স্পেসিফিক টপিকের উপর যেমন – গেইম, জব সার্কুলার, মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন রিলেটেড অ্যাড শো করানোর জন্য টার্গেট অডিয়েন্স হিসাবে সেট করে ফেলা সম্ভব। ফলে সে এই স্পেসিফিক টপিকের উপর অ্যাড দেখতে পারবে।

তথ্য নজরদারি

Federal Trade CommissionFTC – এর রিপোর্ট অনুযায়ী, বিশেষ করে বড় ISP গুলো ইউজারের ব্রাউজিং ডেটা, অ্যাপ-ইউজ, এমনকি রিয়েল-টাইম লোকেশন ডেটা সংগ্রহ করে। এই তথ্য দিয়ে তারা ব্যবহারকারীদের এমন প্রোফাইল তৈরি করে, যেখানে শুধু কি ওয়েবসাইট দেখা হয়েছে বা অ্যাপ চালানো হয়েছে তা-ই নয়, অনেক গোপন সেনসিটিভ বিষয়, যেমন – মানুষের জাতিগত বা বর্ণগত পরিচয়, Sexual Orientation বা একজন মানুষ কোন লিঙ্গের প্রতি আকৃষ্ট, তা স্পেসিফাই করা হয়ে থাকে।

৪. বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট

Personal Data Protection Ordinance 2025

বাংলাদেশে Personal Data Protection Ordinance (PDPO) 2025 – প্রথম ডেটা প্রাইভেসি আইন।

এই অর্ডিন্যান্সের মূল বিষয়গুলো:

  • Explicit Consent : ব্যক্তিগত ডেটা সংগ্রহ ও প্রক্রিয়াকরণে স্পষ্ট সম্মতি আবশ্যক।
  • Data Protection Officer (DPO): নির্দিষ্ট ক্যাটেগরির প্রতিষ্ঠানগুলোতে সেনসিটিভ ডেটা ম্যানেজ করার জন্য Data Protection Officer নিয়োগ বাধ্যতামূলক।
  • Voice Data Protection: ভয়েস(কল রেকর্ড, হিস্ট্রি) ডেটা যদি ব্যবহৃত হয় তবে সেটি সেনসিটিভ বায়োমেট্রিক ডেটা হিসেবে গণ্য হবে।

তবে,

Bangladesh Telecommunication Regulation Act, 2001-এর Section 97Ka অনুযায়ী, জাতীয় নিরাপত্তা বা জনশৃঙ্খলার ভিত্তিতে যেকোনো ব্যক্তির তথ্য “intercept, record or collect” করার ব্যাপক ক্ষমতা সরকারকে প্রদান করা হয়েছে।

BTRC-এর জারি করা লাইসেন্স অনুযায়ী, লাইসেন্সধারীদের (ISP) monitoring ও interception সুবিধা দেয়া এবং সরকারি সংস্থাগুলোকে নজরদারির জন্য তথ্য প্রদান করতে হয়।

ড্রাফট ডেটা প্রোটেকশন আইনে ডেটাকে লোকালি সংরক্ষণের বাধ্যবাধকতা রয়েছে, যা নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর নজরদারির নতুন সুযোগ তৈরি করে। (- বিস্তারিত এখানে)

৫. ঝুঁকি

প্রাইভেসিঃ

ব্রাউজিং প্যাটার্ন থেকে প্রোফাইল তৈরি করে টার্গেটেড বিজ্ঞাপন দেখানো এবং বিভিন্ন অনলাইন সার্ভিসের জন্য প্রাইজ ম্যানিউপুলেশন বা অনলাইন সিন্ডিকেট তৈরি করে ফেলা সম্ভব, কারণ এখানে টার্গেটেড অডিয়েন্স কে মেজার করা যায়।

এই ডেটা তৃতীয় পক্ষ বা ডেটা ব্রোকারদের কাছে বিক্রি করতে পারে, ফলে আমাদের তথ্য বিজ্ঞাপনদাতা এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের হাতে চলে যায়। লোকেশন ডেটা রিয়েল-টাইমে ট্র্যাক হলে শারীরিক নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি হতে পারে, যেমন আপনি বাড়িতে আছেন নাকি বাইরে, নিয়মিত কোন জায়গায় যান – এসব অনুমান করা সম্ভব হয়। আর যখন রাষ্ট্র বা সরকারি সংস্থার ব্যাপক মনিটরিং ক্ষমতা থাকে, তখন এই ধরনের ডেটা ব্যবহার করে মানুষের ওপর নজরদারি বাড়ানো এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতা পরোক্ষভাবে সংকুচিত করার আশঙ্কাও থাকে।

নিরাপত্তা ঝুঁকিঃ 

হ্যাকাররা ISP নেটওয়ার্কে প্রবেশ করে সেনসিটিভ তথ্য (ইউজারনেম, পাসওয়ার্ড, পেমেন্ট ইনফরমেশন) ইন্টারসেপ্ট করার চেষ্টা করতে পারে।

আক্রমণকারীরা DNS রেকর্ড ম্যানিপুলেট করে ব্যবহারকারীদের ক্ষতিকর ওয়েবসাইটে রিডাইরেক্ট করতে পারে, DNS Spoofing ও Man-in-the-Middle Attacks। (অনেক সরকারী ওয়েবসাইটে দেখা যায় অনলাইন জুয়া বা বেটিং এর এর পেইজ রিডাইরেক্ট করা থাকে, বিশেষ করে গুগোলে সার্চ করলে দেখা যায়)

ISP নেটওয়ার্কের মাধ্যমে আপনার ডিভাইসে বা আপনি যদি কোন দূর্বল ওয়েবসাইট ব্রাউজ করেন তা আইডেন্টিফাই করে ফিশিং অ্যাটাক ও ম্যালওয়্যার ইন্সপেক্ট করে আপনার ডিভাইসের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ফেলতে পারে।

৬. কীভাবে নিজেকে সুরক্ষিত রাখবেন

দৈনন্দিন ইন্টারনেট ব্যবহার করার ক্ষেত্রে নিজেকে ১০০% নিরাপদ রাখা সম্ভব হবে না। তবে সচেতন হওয়া গুরুত্বপূর্ন। নিচে কয়েকটা উপায় আলোচনা করা হলঃ

VPN (Virtual Private Network) ব্যবহার সবচেয়ে কার্যকর সমাধান

VPN হলো ISP ট্র্যাকিং থেকে বাঁচার সবচেয়ে কার্যকর উপায়।

VPN কীভাবে সুরক্ষা দেয়:

ট্রাফিক এনক্রিপ্ট করে – আপনি কোথায় থেকে ব্রাউজ করছেন তা লুকিয়ে ফেলে। অর্থাৎ ইউজার সোর্সকে হাইড করে ফেলে।

IP address মাস্ক করে – আপনার আসল আইপি কে লুকিয়ে একটি টেম্পোরারি নতুন আইপি জেনারেট করে এতে আপনার আসল অবস্থান সেই আইপি দিয়ে কোনভাবেই বের করা সম্ভব না।

DNS কোয়েরি এনক্রিপ্ট করে – এতে আপনি যে ওয়েবসাইটে ভিজিট করবেন তা এনক্রিপ্ট করে ফেলে। তাই আপনি স্পেসিফিক কোন ওয়েবসাইট ব্রাউজ করেছেন তা দেখতে পারে না।

তবে, অনলাইনে থাকা যত্রতত্র ভিপিএন ব্যবহার করা যাবে না, নিচের বিষয়গুলো খেয়াল রাখুনঃ

  • ভিপিএনটি No-logs policy স্টাব্লিশ করেছে কিনা।
  • AES-256 বা সমতুল্য শক্তিশালী এনক্রিপশন আছে কিনা।
  • Kill switch সুবিধা প্রদান করে কিনা।
  • DNS leak protection আছে কিনা।
  • Obfuscated servers (সেন্সরশিপযুক্ত অঞ্চলের জন্য, কিছু দেশ VPN ব্লক করে দেয়, যেমন – চীন, ইরান, রাশিয়া, UAE ইত্যাদি)

উপরের বিষয়গুলো না বুঝলে, অনলাইনে জনপ্রিয় এবং ভাল রেটিং/রিভিউ যুক্ত ভিপিএন যাচাই করে কানেক্ট করুন।

Tor Browser ব্যবহার

Tor Browser যখন ব্যবহার করা হয়, তখন আপনার ইন্টারনেট ট্রাফিক এক জায়গা থেকে সরাসরি টার্গেট ওয়েবসাইটে না গিয়ে অনেকগুলো সার্ভার (নোড) ঘুরে ঘুরে যায়।
ফলে কেউ সহজে বুঝতে পারে না আপনি কে এবং কোন ওয়েবসাইট ব্যবহার করছেন।

  • ISP দেখতে পারে আপনি Tor ব্যবহার করছেন তবে কন্টেন্ট দেখতে পারে না।
  • শুধু ওয়েব ব্রাউজার ট্রাফিক সুরক্ষিত হয়, অন্য ডিভাইস অ্যাপ্লিকেশন নয়, যেমন – ফেসবুক, ইন্সটাগ্রাম, ইউটিউব ইত্যাদি।
  • Advanced traffic analysis দ্বারা কিছু ক্ষেত্রে deanonymization সম্ভব।

DNS over HTTPS (DoH) / DNS over TLS (DoT)

DNS এনক্রিপশন ব্যবহারের একটি বড় সুবিধা হলো ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার (ISP) আপনার DNS কোয়েরি দেখতে পারে না, অর্থাৎ আপনি কোন ওয়েবসাইটে ভিজিট করছেন তা তারা বুঝতে পারে না। এর ফলে Man-in-the-Middle আক্রমণ থেকে সুরক্ষা পাওয়া যায় এবং টার্গেট অডিয়েন্স ভিত্তিক বিজ্ঞাপনের জন্য ISP-এর কাছে কম তথ্য যায়, কারণ তারা আপনার ব্রাউজিং প্যাটার্ন সম্পর্কে পূর্ণ ধারণা পায় না। তবে, DNS এনক্রিপ্টেড হলেও ISP আপনার IP Address দেখতে পাবে। তাই DNS এনক্রিপশন একদম পুরোপুরি সিকিউরিটি দেয়না(মিডিয়াম প্রোটেকশন দেয়)। শক্তিশালী প্রাইভেসি দরকার হলে VPN বা Tor ব্যবহার করা প্রয়োজন।

কীভাবে DoH / DoT চালু করবেন:

  • Firefox: Settings → Privacy & Security → DNS over HTTPS Enable
  • Chrome: Settings → Privacy and security → Security → Use secure DNS
  • Cloudflare (1.1.1.1), Google (8.8.8.8), Quad9 (9.9.9.9) DoH/DoT

গুরুত্বপূর্ণ নোট: কোনো একক সমাধান ১০০% গোপনীয়তা দিতে পারে না। VPN ব্যবহার করলে আপনি ISP থেকে সিকিউরড হলেও VPN প্রোভাইডার আপনাকে ট্র্যাক করতে পারবে। তাই বিশ্বস্ত, No-logs policy অনুসরণকারী VPN নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। (কিছু No-logs VPN: NordVPN, Surfshark, Proton VPN, CyberGhost VPN)

রেফারেন্সঃ

  1. Does my ISP spy on my web browsing? Can DuckDuckGo help?https://spreadprivacy.com/protection-from-isp-spying/
  2. Deep Packet Inspection (DPI): How it works and why it’s…
    https://www.ir.com/guides/deep-packet-inspection
  3. FTC Staff Report Finds Many Internet Service Providers Collect…
    https://www.ftc.gov/news-events/news/press-releases/2021/10/ftc-staff-report-finds-many-internet-service-providers-collect-trove
  4. Bangladesh: Data Protection Act – Brittle Shield or Blunt…
    https://techglobalinstitute.com/announcements/blog/governments-around-the-world-are-increasingly-forming-rules-for-the-internet/
  5. Here’s what your ISP sees when you’re using a VPN
    https://surfshark.com/blog/can-isp-see-vpn
  6. Firefox DNS over HTTPS
    https://support.mozilla.org/en-US/kb/firefox-dns-over-https

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *