গুগল ডিজিটাল গ্যারেজ (Google Digital Garage) – ডিজিটাল স্কিল বৃদ্ধিতে সেরা প্লাটফর্ম হতে পারে আপনার জন্য।

গুগল বিশ্বের এক নাম্বার সার্চ ইঞ্জিন এবং টেক জায়ান্ট কোম্পানিগুলোর মধ্যে অন্যতম। এটি প্রতিনিয়ত আমাদের আপডেটেড সব প্রযুক্তিগত সুবিধা দেয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছে, যা আমাদের জীবনযাত্রা সহজ করে দিচ্ছে।
সবকিছুই এখন ডিজিটালাইজড হয়ে যাওয়ায় আমাদের জন্য সবচেয়ে জরুরী ডিজিটাল স্কিল বিল্ড আপ করা। আমরা যে প্রফেশনেরই হই না কেন, যে বিষয়ের স্টুডেন্টই হই না কেন, আমাদের জ্ঞান, দক্ষতা এবং কাজের প্রয়োগ এখন ডিজিটালাইজেশনের মাধ্যমেই বেশি করতে হচ্ছে। তাই ডিজিটাল স্কিলে এগিয়ে থাকা মানুষগুলোই বর্তমানে সব সেক্টরের প্রথম সারিতে অবস্থান করে।
গুগল ডিজিটাল গ্যারেজ (Google Digital Garage) চায় আমাদের সবাইকেই ডিজিটালি স্কিল্ড করতে, ক্যারিয়ারের দৌড়ে এগিয়ে রাখতে।

গুগল ডিজিটাল গ্যারেজ (Google Digital Garage) কি?

স্বভাবতই মানুষমাত্রই কৌতূহলী। আর সেই কৌতূহল থেকেই হয়ত অনেকে নিজের স্টাডি ফিল্ডের বাইরেও অনেক বিষয় জানতে চায়, শিখতে চায়।
যেমন, কেউ হয়ত আইটি সেক্টরের না হয়েও প্রোগ্রামিং বা মেশিন লার্নিং শিখতে চাইছে, কিন্তু কোথা থেকে শুরু করবে বুঝতে পারছে না।
আবার কেউ হয়ত বিজনেস ব্যাকগ্রাউন্ডের না হয়েও নিজের একটা ই-কমার্স কোম্পানি শুরু করতে চাইছে।
অথবা কেউ নতুন কিছু শেখার আগ্রহ বোধ করছে।
আপনি যদি এইসব দলের কেউ একজন হয়ে থাকেন, তবে গুগল ডিজিটাল গ্যারেজ (Google Digital Garage) আপনার জন্যই তৈরী হয়েছে বলে ধরে নিন।
গুগল ডিজিটাল গ্যারেজ (Google Digital Garage) ২০১৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে একটি অলাভজনক প্রোগ্রাম হিসেবে, যা ডিজাইন করা হয়েছে ফ্রী তে মানুষের ডিজিটাল স্কিল বৃদ্ধিতে সাহায্য করার জন্য।
এটি খুবই ইজি একটা ইন্টারফেসে তৈরী। যারা কোর্সেরা (Coursera) সম্পর্কে জানেন এবং এর কোর্সগুলো করেছেন, তারা ডিজিটাল লার্নিং প্লাটফর্মের শিক্ষাপদ্ধতি সম্পর্কে জানেন আশা করি।
গুগল ডিজিটাল গ্যারেজ (Google Digital Garage) অনেকটা সেরকমই।
এতে ১৫৬টা ফ্রী কোর্স বিভিন্ন ডিজিটাল স্কিল ডেভেলপমেন্টের জন্য রয়েছে। যেগুলো যে কেউ যে কোনো সময় করতে পারে। আপনি ফ্রি হলেও করতে পারবেন, ব্যস্ত হলেও করতে পারবেন কাজের ফাঁকে সময় করে। কারণ এর কোনো নির্দিষ্ট টাইলাইন নেই যে, এনরোল করার এতোদিনের মাঝেই শেষ করতে হবে। তাই খুবই ফ্লেক্সিবল সবার জন্যই।
আর কিছু কোর্সের সার্টিফিকেটও ফ্রি তে পেয়ে যাবেন কোর্স শেষে।

গুগল ডিজিটাল গ্যারেজ (Google Digital Garage) এ শুরু কিভাবে করবেন?

খুব সহজেই গুগল গ্যারেজের একজন শিক্ষার্থী হিসেবে আপনি শুরু করতে পারবেন। গুগলে Google Digital Garage লিখে সার্চ করে প্রথমেই পেয়ে যাবেন Google Digital Garage এর ওয়েবসাইট। সেখানে ঢুকে Registration সেকশনে গিয়ে যাস্ট আপনার নাম এবং ইমেইল এড্রেস দিয়েই আপনি রেজিস্ট্রেশন করে ফেলতে পারবেন। অথবা https://learndigital.withgoogle.com/digitalgarage এই লিংকে গিয়ে আপনি সহজেই Sign Up করে শেখা শুরু করতে পারেন।

রেজিস্ট্রেশনের পর আপনাকে তারা “My Learning Plan” স্ক্রীণে নিয়ে যাবে এবং তাদের অফারকৃত কোর্সগুলো সাজেস্ট করবে। সেখান থেকে আপনার পছন্দ অনুযায়ী যে কোনো কোর্স একদম বিনামূল্যে শুরু করে দিতে পারেন আপনি।
প্রথমে গুগল গ্যারেজ খুব পপুলার কোর্সগুলো আপনার সামনে নিয়ে আসবে। তবে সেই কোর্সগুলো নিয়ে আপনি আগ্রহী না হলে, ক্যাটাগরি অনুযায়ী নিজের আগ্রহের কোর্সটি খুঁজে বের করে নিতে পারেন। কোন কোর্সে করতে কত সময় লাগতে পারে, কোনটা বেসিক লেভেলের কোর্স কোনটা এডভান্স লেভেলের কোর্স, কোন কোর্স করতে কতটা ডিফিকাল্টি ফেইস করতে হবে সবই গুগল আগেই ক্লিয়ার করে দিয়েছে, সেই অপশন অনুযায়ী তাই আপনার কোর্সগুলো সিলেক্ট করতে খুব সহজ হবে।

কি ধরণের কোর্স গুগল ডিজিটাল গ্যারেজ (Google Digital Garage) অফার করে?

মূলত তিনটা ক্যাটাগরিতে গুগল ডিজিটাল গ্যারেজ (Google Digital Garage) তাদের কোর্সগুলোকে ভাগ করেছে-

  1. ডিজিটাল মার্কেটিং (Digital Marketing
  2. ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট (Career Development)
  3. ডাটা এন্ড টেক (Data and Tech)

ডিজিটাল মার্কেটিং (Digital Marketing) এ আগ্রহীদের জন্য গুগল গ্যারেজের Fundamentals of Digital Marketing কোর্স বেস্ট একটা অপশন, এছাড়াও Expand a Business to Other Countries, and Marketing in a Digital World ইত্যাদি প্রত্যেকটা কোর্সই খুব হেল্পফুল হবে। এই কোর্সগুলো ডিজিটাল বিজনেস এবং মার্কেটিং, এসইও (SEO), গুগল এনালাইটিক্স (Google Analytics), গুগল এড(Google Ad) ইত্যাদি সহ ই-কমার্স রিলেটেড আরও অনেক বিষয় শেখাবে।
ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট (Career Development) কোর্সগুলো ডিজাইন করা হয়েছে প্রতিযোগিতামূলক ক্যারিয়ার লাইফে নিজেদেরকে এগিয়ে রাখতে আমাদের যে সব স্কিল এবং নলেজ থাকা দরকার, যেভাবে আমাদেরকে তৈরী হওয়া দরকার সেই বিষয়গুলো নিয়ে।
যেমনঃ পাবলিক স্পিকিং, ইফেক্টিভ নেটওয়ার্কিং, সেলফ প্রমোশন, বিজনেস কমিউনিকেশন, স্টোরি টেলিং ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়ের উপর ৬২টি কোর্স অফার করা করেছে গুগল ডিজিটাল গ্যারেজ (Google Digital Garage)।
আর আপনি যদি টেকনিকাল বিষয়ে দক্ষ হতে চান তবে গুগল ডিজিটাল গ্যারেজ (Google Digital Garage) এর ডাটা এন্ড টেক (Data and Tech) কোর্সগুলো আপনার জন্যই। এই সেকশনেও ৬২টা কোর্স রয়েছে, যেগুলো আপনার টেকনিকাল স্কিলের স্ট্রং ফাউন্ডেশন তৈরী করে দিতে পারে।
কোডিং এর বেসিক, মেশিন লার্নিং এর বেসিক, গুগল ক্লাউড, অনলাইন বিজনেস সিকুরিটি, বিগ ডাটা, আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স, গ্রাফিক্স ডিজাইনিং, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট ইত্যাদি আরও অসংখ্য বিষয়ের উপর ফ্রি কোর্স অফার করছে গুগল ডিজিটাল গ্যারেজ (Google Digital Garage)।
এই কোর্সগুলো বিশ্বের সেরা কিছু ইউনিভার্সিটির অফারকৃত কোর্স, যা স্কিল্ড টিচার এবং ইন্ডাস্ট্রী এক্সপার্টদের দ্বারা পরিচালিত হয়।
এছাড়াও গুগল ডিজিটাল গ্যারেজ (Google Digital Garage) এ ওয়েবিনারে অংশগ্রহণেরও সুযোগ আছে, যার মাধ্যমে CV তৈরী, প্রেজেন্টেশন তৈরী, সোসাল মিডিয়া কন্টেন্ট রাইটিং, অনলাইন পার্সোনাল ব্র্যান্ডিং ইত্যাদি বিষয় আলোচনার মাধ্যমে শেখানো হয়।
আর খুবই ইজি লেকচার, সহজেই বুঝতে পারবেন। লেকচার শুনার পর আবার পড়েও বোঝার সুযোগ আছে। কুইজগুলোও খুব ইজি। অভারঅল খুব ফ্লেক্সিবল ফিল করবেন, তাই ভালো লাগবে কর্সগুলো এবং হাজারো ব্যস্ততার ভেতরেও সবগুলো কোর্সই চাইলে আপনি ধীরে ধীরে করে ফেলতে পারবেন। এটি আপনার ডিজিটাল স্কিল বৃদ্ধির পাশাপাশি আপনাকে অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী করে তুলবে।

গুগল কেন আমাদেরকে ফ্রী কোর্স অফার করছে?
এখন আপনার মনে প্রশ্ন জাগতেই পারে-

গুগল কেন আমাদেরকে এতোগুলো ফ্রী কোর্স অফার করছে? এর পেছনে তাদের মোটিভ কি? এতে তাদের লাভ কি?
গুগলের অন্যতম উদ্দেশ্য হচ্ছে তাদের ইকোসিস্টেমের সাথে আপনাকে দীর্ঘ সময় কানেক্টেড রাখা। তাদের প্রোডাক্ট সার্ভিস ব্যবহারে আরও আকৃষ্ট করা। কোর্সগুলোও এভাবেই ডিজাইন করেছে তারা।
এছাড়া গুগল একটা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, আর তাই এর আল্টিমেট টার্গেট সব সময় প্রফিট করা হওয়াটাই স্বাভাবিক। আমরা সবাই জানি গুগল আমাদের তথ্য নিয়ে বিজনেস করে। মানে, গুগল প্রোডাক্ট সার্ভিস ব্যবহারের সুবাদে আমরা অনেক ব্যক্তিগত তথ্যই এর সাথে শেয়ার করি, আমাদের মুভমেন্ট ২৪ ঘণ্টাই অব্জার্ভ করে তারা। সেই অবজারভেশন থেকেও তারা তথ্য সংগ্রহ করে।
কোর্সগুলো করার সময়ও আমরা এমন অনেক তথ্য শেয়ার করব , যা আমাদের অভারঅল ব্যক্তিত্বের পরিচায়ক। এই তথ্যগুলো নিয়ে তারা বিভিন্ন কোম্পানি , যারা গুগলে এডভারটাইজমেন্ট করে থাকে, তাদের সাথে শেয়ার করে প্রফিট জেনারেট করে।
আর সেই কোম্পানিগুলো আমাদের তথ্য নিয়ে, আমাদেরকে এনালাইসিস করে , আমাদের পছন্দ অপছন্দ বুঝে মার্কেটিং করে, বিজনেস প্রমোশন এবং প্রোডাক্ট প্রেজেন্টেশন করে থাকে। এটাই গুগলের বিজনেস স্ট্রাটেজি বলে জানি আমরা।


গুগল ডিজিটাল গ্যারেজের এই কোর্সগুলো কি আমাদের ক্যারিয়ারে কোনো হেল্প করবে?

অবশ্যই করবে! গুগল একটি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান এবং গুগল ডিজিটাল গ্যারেজের এই অফারকৃত কোর্সগুলো যেভাবে ডিজাইন করা হয়েছে, যে কেউ এগুলো শেষ করে ডিজিটাল স্কিলের ক্ষেত্রে সবথেকে এগিয়ে থাকবে। আর এইসব স্কিলগুলো যে কোনো জবের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয়, কারণ এটা ডিজিটাল যুগ। ডিজিটাল নলেজ যে কোনো কম্পিটিটিভ জবে এগিয়ে থাকতে সাহায্য করে।
আরেকটা ব্যাপারে অবগত হওয়া জরুরী।
গুগল ডিজিটাল গ্যারেজের এই কোর্সগুলোর সার্টিফিকেটের কিন্তু নির্দিষ্ট মেয়াদ থাকে। কোর্সভেদে এগুলোর মেয়াদ ৬মাস থেকে ২ বছর পর্যন্ত হয়ে থাকে। মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে আবার সেই কোর্সগুলো করে, সার্টিফিকেট রিনিউ করে নিতে হবে।
গুগল ডিজিটাল গ্যারেজের সেরা কোর্স সবার মতে, Fundamental of Digital Marketing. টোটাল ৪০ ঘণ্টার কোর্স আপনাকে ডিজিটাল মার্কেটিং এর বস বানিয়ে দিতে পারে। এটি সম্পূর্ণ ফ্রী কোর্স এবং কোর্স শেষে সার্টিফিকেটও দিয়ে থাকে।
আশা করি এই লেখা পড়ে গুগল ডিজিটাল গ্যারেজ (Google Digital Garage) সম্পর্কে ক্লিয়ার আইডিয়া পেয়েছেন। সময় সুযোগ করে আপনার আগ্রহের বিষয়বস্তুটি সিলেক্ট করে গুগল ডিজিটাল গ্যারেজের কোর্স করে নিজেকে এক ধাপ এগিয়ে নিতে পারেন এই ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডে।

ভাল লাগলে ব্লগটি শেয়ার করুন-
Suhanur Rahman
Suhanur Rahman

আমি কম্পিউটার বিজ্ঞান, প্রোগ্রামিং এবং ডেটা সায়েন্স নিয়ে গভীর আগ্রহী। আমি নিয়মিতভাবে নতুন কিছু শিখছি এবং আমার দক্ষতাগুলি বৃদ্ধি করতে নিজেকে চ্যালেঞ্জ করছি, যাতে ইম্প্যাক্টফুল অবদান রাখতে পারি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *