পিপল হ্যাভ ডিফারেন্ট লেভেল অফ সেনসিটিভিটি!

মনে করেন কর্মক্ষেত্রে, সহকর্মীদের মধ্যে কেউ হয়তো সমালোচনাকে খুব সাধারণভাবে নেয়। সে মনে করে, সমালোচনা তার কাজের প্রোডাক্টিভিটি বাড়ানোর জন্য সহায়ক। কিন্তু অন্য একজন হয়তো সমালোচনাকে ব্যক্তিগত আক্রমণ হিসেবে দেখে এবং তা নিয়ে মানসিকভাবে খুব চাপ অনুভব করে।

পরিবারের মধ্যেও বিষয়টা লক্ষ করা যায়। যেমন, পরিবারের কেও একজন হয়তো ছোটখাটো বিষয় নিয়ে ঝামেলা হলে তাতে মনোমালিন্য না হয়ে বা মন খারাপ না করে লজিক্যালি চিন্তা করে সহজেই তা ভুলে যেতে পারে, কিন্তু অন্য একজন সেই বিষয়কে বড় করে দেখে এবং দীর্ঘদিন ধরে মনখারাপ করে থাকে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে, একজনের জন্য যা স্বাভাবিক, অন্যজনের জন্য তা মানসিক চাপে রূপ নেয়। অনেক সময় বাবা-মা তাদের সন্তানের ওপর রাগ করলে, অনেক সন্তান সেটিকে সহজে মানিয়ে নেয়, কিন্তু অন্যজন এতে খুব কষ্ট পায় এবং নিজের প্রতি আত্মসম্মানবোধ কম মনে করে। সারাক্ষণ তা নিয়ে মেন্টাল ম্যাথ করে।


ধরা যাক, আপনি এবং আপনার একজন বন্ধু একসঙ্গে রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন। মজার ছলে আপনি তাকে বললেন, চিকনা / বাইট্টা। আপনি হয়তো বিষয়টিকে গুরুত্ব না দিয়ে মজার ছলে পাশ কাটিয়ে যাবেন, কিন্তু আপনার বন্ধু এতে মানসিকভাবে ভেঙে পড়তে পারে। তার কাছে এই অভিজ্ঞতা হয়তো অপমানজনক ও আক্রমণাত্মক মনে হবে, যেখানে আপনি একই ঘটনাকে গুরুত্বহীন মনে করেছেন।


আগস্টের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একটা উদাহরণ দেয়া যেতে পারে, এই আন্দোলনকে ঘিরে প্রকাশ্যে নানা ধরণের নৃশংসতা পুরো দেশ দেখেছে। উক্ত ঘটনা দেখার পর এমন অনেকেই আছেন যারা এখনো সেই ট্রমা কাটিয়ে উঠতে পারেননি। রাকিব(ছদ্মনাম) – ১৯ বছরের এই ছেলের ভাষ্যমতে, সে এই ধরণের নৃশংসতা দেখে রাতের বেলায় একা ঘুমাতে পারে না। একা ঘুমাতে গেলে তার মনে হয়, এই বুঝি জানালা বেঁধ করে তার গায়ে গুলি লাগবে। “আমি যখন একা ঘুমাবার উদ্দেশ্যে চোখ বুজি, আমার মনে হয় আমি রাস্তায় আন্দোলন করছি, একা পুরো রাস্তায় কেও নাই, আছে ধোঁয়া, ধোলা, টিয়ারশেল আর পুড়া টায়ারের গন্ধ, আমার চোখ জ্বলছে, পুলিশ আমাকে তাড়া করছে, আমি দৌড়াচ্ছি, প্রাণপণ বাঁচার চেষ্টা করছি। আমার সারা শরীর যন্ত্রণা করে, আমি বিছানা থেকে উঠে পরি। পাশে কেও না থাকলে আমি একা ঘুমাতে পারি না” একইভাবে কেউ যদি কোন দুঃখজনক ঘটনা দেখে, যেমন কোনো প্রিয়জনের মৃত্যু বা বড় দুর্ঘটনা, তার জন্য এই পরিস্থিতি হতে পারে অত্যন্ত গভীর। কেও কেও হয়তো দ্রুত সেই পরিস্থিতি থেকে মানসিকভাবে স্ট্রং থেকে তা অভারকাম করতে পারে, আবার কেও দীর্ঘসময় ধরে মানসিক যন্ত্রণা অনুভব করতে পারে। একজনের মনের জোরে হয়তো তাকে সবকিছু থেকে মুভ অন করতে এগিয়ে যেতে সাহায্য করে, কিন্তু আরেকজনের সেনসিটিভিটি তাকে দীর্ঘস্থায়ী মানসিক চাপের মধ্যে ফেলে রাখে।


আপনার কাল গুরুত্বপূর্ণ এক্সাম। ফেইল ঠ্যাকাতে রাত জেগে পড়াশোনা করা জরুরী। কিন্তু পড়তে পারছেন না। আপনার রুমমেট লাইট জ্বালাতে দিচ্ছে না, তার ঘুমের বারোটা বাজে। এ ধরণের পরিস্থিতিতে অনেকেই পড়ে থাকার কথা। শব্দ, আলো, এগুলোতেও অনেকের সেনসিটিভিটির বিষয় থাকে। উদাহরণস্বরূপ, কেউ হয়তো কনসার্টে গিয়ে উচ্চ ভলিউমে গান শুনতে পছন্দ করে, কিন্তু অন্য কেউ সেই পরিবেশে গিয়ে অস্বস্তি অনুভব করতে পারে এবং মানসিকভাবে বিচলিত হয়ে পড়ে। আপনার বয়ফ্রেন্ড পাহাড়ে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে, আপনি সাগরে গাঁ ভাসাতে। আপনি বিটিএস লাইক করেন, আর আপনার বয়ফ্রেন্ড বাংলা ফোক সং -এ চিল পায়। আপনি ডিজে পার্টি পছন্দ করেন, আর আপনার পার্টনার হয়ত চুপচাপ, নিরিবিলি, শান্ত পরিবেশ পছন্দ করে। সো, পরিবেশগত বিষয়েও মানুষের সেনসিটিভিটির ভিন্নতা থাকে।


একদিন আপনার বন্ধু ইলন মাস্কের সাথে লাগলো এক ক্যাচাল। ক্যাচালের বিষয় – কোনটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ, শিক্ষাগত যোগ্যতা নাকি অভিজ্ঞতা?

মাস্ক বলতেসে – অভিজ্ঞতা সবসময় বেশি কার্যকর কারণ তাত্ত্বিক জ্ঞান যতই থাকুক, বাস্তব অভিজ্ঞতা না থাকলে কাজ শেখা সম্ভব নয়। অন্যদিকে আশেপাশে বাকীরা ইলন মাস্ককে কটাক্ষ করে কইলো, ‘শিক্ষাগত যোগ্যতা ছাড়া তুমি সুযোগই পাবে না অভিজ্ঞতা অর্জনের’। বাকীদের সাথে আপনিও একমত প্রকাশ করে বইলা বসলেন, ‘তোর কি শিক্ষাগত যোগ্যতা আছে?, বড় ডিগ্রী না থাকলে তোরে গণনায় রাখবে কোন বেটায়।’  ব্যাস! মন খারাপ করে মাস্ক সাহেব চুপচাপ বের হয়ে গেল। আপনারা সকলে হাই ফাইভ দিয়ে উচ্চস্বরে হেসে উঠলেন।

ঠিক কিছু মানুষ বিতর্ক বা মতবিরোধকে জীবনের স্বাভাবিক অংশ হিসেবে দেখে এবং সহজেই এগুলো নিয়ে আলোচনায় জড়াতে পারে। অন্যদিকে, কেউ কেউ মতবিরোধ বা ঝগড়া হলে মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে এবং সেই পরিস্থিতি এড়িয়ে চলার চেষ্টা করে। এ ধরনের সেনসিটিভিটি একেক জনের আত্মবিশ্বাস এবং মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করার ওপর নির্ভর করে ভিন্ন হতে পারে।


মানুষ ভিন্ন ভিন্ন ভাবে একই পরিস্থিতির প্রতিক্রিয়া জানায়, যা তাদের সেনসিটিভিটির ভিন্নতার প্রতিফলন। সেনসিটিভিটি নির্ভর করে নানা বিষয়ের ওপর—ব্যক্তির শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্য, তাদের পূর্ব অভিজ্ঞতা, এবং তাদের আশেপাশের পরিবেশ।

একজন মানুষের জন্য যে অভিজ্ঞতা খুব সাধারণ, অন্যজনের জন্য তা বড় মানসিক চাপে পরিণত হতে পারে। এ কারণেই বিভিন্ন সামাজিক এবং পেশাগত পরিবেশে সেনসিটিভিটির বা সংবেদনশীলতার বিষয়টি বিবেচনায় রেখে মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করা এবং সমালোচনা বা পরামর্শ দেওয়ার সময় সতর্ক থাকা উচিত। কারণ – “পিপল হ্যাভ ডিফারেন্ট লেভেল অফ সেনসিটিভিটি!”

ভাল লাগলে ব্লগটি শেয়ার করুন-
Suhanur Rahman
Suhanur Rahman

আমি কম্পিউটার বিজ্ঞান, প্রোগ্রামিং এবং ডেটা সায়েন্স নিয়ে গভীর আগ্রহী। আমি নিয়মিতভাবে নতুন কিছু শিখছি এবং আমার দক্ষতাগুলি বৃদ্ধি করতে নিজেকে চ্যালেঞ্জ করছি, যাতে ইম্প্যাক্টফুল অবদান রাখতে পারি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *