প্রযুক্তি আমাদের জীবনকে কিভাবে প্রভাবিত করে?

বিংশ শতাব্দী প্রযুক্তি খাতে বিপ্লব এনেছিলো। ক্যাসেট, ফ্লপি ডিস্ক, সিডি, পেন ড্রাইভ ডিজিটাল ডাটা কম্পিউটার , ইন্টারনেট, মোবাইল ইত্যাদি আবিস্কার বিংশ শতাব্দির সন্তান।

একবিংশ শতাব্দী সেখানে রাজত্ব করছে, বলা যায় স্বর্ণযুগ চলছে। ২১ শতকের সব থেকে প্রলয়ংকারী আবিস্কার হচ্ছে স্মার্টফোন। অভিনেতা অনুপম খের একটা ভিডিওতে বলেছিলো, মোবাইল বিংশ শতাব্দীর প্রায় সকল আবিস্কারকে গিলে খেয়েছে। রেডিও, টেলিভিশন, সিডি, সিনেমা হল সব কিছু। তার থেকে বড় কথা সময় খেয়ে ফেলছে।

ছবিঃ AI জেনারেটেড

একটা সময় মানুষ মানুষের সংগ চাইতো। আজকে আমরাই বন্ধুরা এক সাথে হলেও, সবাই এক সাথে বসে মোবাইল ই দেখি। কারো কথা কেউ খেয়াল করে শুনবার সময় নেই। স্বামী স্ত্রী একি রুমে রাতভর পাশাপাশি। অথচ যে জার মত মোবাইল নিয়েই বেস্ত।

আগে যেখানে একটা ক্ষেতের ফসল তুলতে ১০-২০ জন কামলা (কর্মচারী) লাগতো। প্রয়োজনের তাগিতে এলাকার মানুষের সাথে সুসম্পর্ক রাখতে হত। এখন সেখানে মাত্র ১ জন আর একটা মেশিন হলেই হয়ে যাচ্ছে। তাই পাশের বাড়ির জদু মধুর সাথে ঝগড়া লাগলেই কি আসে যায়। ওরে তো আর কোন কাজে লাগে না। শুধু কৃষি খাত না, সব সেক্টরে মানুষের জব খেয়ে ফেলছে।

প্রযুক্তি আমাদের এক প্রকার অলস করে দিয়েছে। সামাজিকতা থেকে অনেক দূরে ঠেলে দিচ্ছে। একাকী বন্দী উটপাখি কিংবা জম্বি ! ২টা শব্দই ব্যবহার করা যায় এ ক্ষেত্রে।

চলুন দৃষ্টিভঙ্গি একটু বদলাই!
এখন দেখবেন প্রযুক্তির ব্যবহারে আপনি কিভাবে ২গুন জীবন লাভ করতে পারছেন।

গত ৭০-৮০ বছর আগেও আমাদের দেশ থেকে হজ্জ করতে গেলে ৬+৬=১২ মাস হাতে নিয়ে নৌকা ও সরক পথে মক্কা যেতে হত। এখন মাত্র ৬+৬=১২ ঘন্টা লাগে। হজ্জের সময় সহ ধরলে প্রায় ১মাস। বাকি ১১ মাস আপনি অন্য কাজে সময় ব্যয় করতে পারছেন। ৩০ বছর আগেও, একটা মৃত্যুর সংবাদ চিঠিতে পৌছতে ৭-১৫ দিন সময় লাগতো। এখন সেটা কয়েক সেকেন্ডেই পাওয়া যায়।

আবার যদি সাম্প্রতিক সময়ের ধারনা দেই। গত বছর ও কোন কিছু জানার জন্য গুগল মামাকে জিজ্ঞেস করতে হত, এবং সে কতগুলো সার্চ পেইজ ধরিয়ে দিতো। সেখান থেকে উত্ত্র খুজে বের করতে হত। ০.০৫ থেকে ৩০ মিনিট পর্যন্ত সময় খরচ হত। অথচ, এখন মামার ভাগ্নে চলে আসছে, চ্যাট জিপিটিকে জিজ্ঞেস করলে মাত্র কয়েক সেকেন্ডে পুরো ইন্টারনেট ফিল্টার করে নির্দিষ্ট তথ্য এনে হাজির করে দিচ্ছে। কোন ওয়েব সাইট ও ঘাটাঘাটি করতে হচ্ছে না।গত ১০০ বছর আগে জন্ম নিয়ে যে কাজ সম্পাদন করতে আপনার ২০০ বছর লাগতো। সেটা এখন ৫০ বছরে অর্জন করতে পারছেন।

পজেটিভ নেগেটিভ উত্তর থেকে আপনি কোনটা নিবেন!
দেখেন, যারা প্রযুক্তিকে কিভাবে ব্যবহার করছি, কিভাবে এটাকে নিংরে সুবিধা ভোগ করছি এর উপর ডিপেন্ড করছে। ছোট্ট একটা গল্প শেয়ার করবো? যদি অনুমতি দেন!

আমার শৈশবে আমার বয়সি এক মেয়ের ঘরে আমি একটা যন্ত্র দেখতে পাই। আমার বয়স কত হবে তখন ৫-৬ হবে হয়তো। আমি এই শহরে এর কাছেই প্রথম কম্পিউটার দেখেছি। তারও প্রায় ৮ বছর পর আমি এই যন্ত্র চালানো শুরু করেছি, তাও লুকিয়ে লুকিয়ে। দুর্ভাগ্য! ঐ মেয়ের এতোদিনে প্রোগ্রামার কিংবা কম্পিউটার জিনিয়াস হয়ে যাওয়ার কথা ছিলো। সে শুধু রোড র‍্যাশ ই খেলেছে। অন্য কিছুই করে নি। আমি যে আহামরি কিছু হয়ে গিয়েছি তাও না। কিন্তু আমার আয়ের উৎস পুরোটাই এই জান্ত্রিক যন্ত্র থেকে।

ফেসবুক চালিয়ে কেউ রাতের ঘুম হারাম করছে, আবার কেউ শুধু ফেসবুক প্লাটফর্ম ব্যবহার করে মাসে লাখ টাকা আয় করছে। আপনি কিভাবে এটার সাথে আচরন করবেন, সেটার পরিপ্রেক্ষিতেই এটা প্রতিক্রিয়া দেখাবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *