|

Leonardo AI : শিল্পের সততার এক অনন্য অধ্যায়। ডিজিটাল আর্ট ও গ্রাফিক ডিজাইন AI মডেলের অনুপ্রেরণার গল্প
লিওনার্দো দা ভিঞ্চি—এই নাম শুনলে হয়তো কারো অচেনা মনে হবে না। ইতালির সেই মহাপ্রতিভাধর শিল্পী, বৈজ্ঞানিক, এবং লেখক, যার কর্মময় জীবন পৃথিবীকে বদলে দিয়েছে। কিন্তু আজ যে লিওনার্দোকে আমরা চিনি, সেই মহান শিল্পী হয়ে ওঠার আগে তার জীবনে এক অদ্ভুত ঘটনা ঘটেছিল।
লিওনার্দো তখনো বিখ্যাত নয়, এক তরুণ ছাত্র। একদিন তিনি এক বিখ্যাত চিত্রশিল্পীর কাছে ইন্টার্নশিপ করতে গেলেন। সেই চিত্রশিল্পী এক মডেলকে—যার নাম ক্যাটরিনা—দাঁড় করিয়ে তার ছাত্রদের নির্দেশ দিলেন মডেলটিকে দেবী হিসেবে আঁকতে। সবাই যার যার খাতায় কাজ শুরু করল, মডেলটিকে যেন দেবীর অবয়বে ফুটিয়ে তুলল। কিন্তু লিওনার্দোর খাতা ছিল একেবারে ফাঁকা। শিক্ষক তার এই অবস্থা দেখে বিরক্ত হয়ে বললেন, “তুমি কি মজা করছো? খাতায় একটা দাগও কাটোনি কেন?”
লিওনার্দো মাথা নিচু করে দৃঢ় কণ্ঠে জবাব দিলেন, “আমি সেভাবে মোটিভেশন পাইনি, স্যার। এই মডেলের শরীরে কাটা দাগ আছে। আমি তাকে দেবী হিসেবে কল্পনা করতে পারছি না। দেবী তো সর্বাঙ্গে সুন্দর হয়।”
এই কথা শুনে ক্যাটরিনা স্বাভাবিকভাবেই ক্ষুব্ধ হলেন। লিওনার্দোর কথা তার আত্মসম্মানে আঘাত করে। কিন্তু ভাগ্যের পরিহাসে কিছুদিন পর ক্যাটরিনা কাজ হারালেন। একদিন রাস্তায় তার সাথে লিওনার্দোর দেখা হয়ে গেল, এবং সে তার আগের রাগ ঝাড়তে লাগল। লিওনার্দো শান্তভাবে শুনলেন এবং বললেন, “আমি তোমার ওপর কোনো অবিচার করতে চাইনি। বরং আমি তোমার আসল সৌন্দর্যকেই ধরতে চেয়েছিলাম। আমি তোমার ছবি আঁকতে চাই, তবে উপযুক্ত পারিশ্রমিক দিয়েই।”
ক্যাটরিনা অবশেষে রাজি হলেন। লিওনার্দো তার ছবিটি আঁকলেন, কিন্তু কোনো কাটা দাগ লুকালেন না। বরং সেই ছবিতে ক্যাটরিনার শরীরের খুঁতগুলোই তার সৌন্দর্যের অংশ হিসেবে ধরা পড়ল। ছবিটি ছিল এক অসাধারণ সৃষ্টি, যেখানে শুধুমাত্র বাহ্যিক সৌন্দর্য নয়, বরং মানবতার সত্যিকারের রূপটি উঠে এসেছিল।
আজকের দিনে শিল্পের প্রতি এমন সততা বিরল। শিল্পীরা সত্য বলার সাহস হারিয়ে ফেলেছে। যে কাউকে দেবী বানানো যায় না—এটা ক’জন মুখের ওপর বলতে পারে? অধিকাংশই পারে না, কারণ কাজ হারানোর ভয় থাকে। তারা শিল্পী নয়, কেবল পটুয়া। আর লিওনার্দো? তিনি কখনোই ফ্রি-তে কাজ করেননি। ডিউক থেকে শুরু করে ধনী চার্চগুলো তাকে কমিশন দিতো, কারণ তিনি জানতেন তার কাজের মূল্য।
আজ যুগ বদলেছে, বদলেছে শিল্পের পরিভাষা। একসময়ের সেই তুলি আর রঙ এখন জায়গা করে নিয়েছে ক্যামেরা আর ডিজিটাল স্ক্রিনে। এখন আর কেউ মডেল হয়ে তৈলচিত্র আঁকতে বসেন না, এখন ফটোগ্রাফির যুগ। কিন্তু এই ফটোগ্রাফিও হয়তো বেশিদিন থাকবে না, কারণ আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) আজ শিল্পের সংজ্ঞাই বদলে দিচ্ছে। এআই প্রযুক্তি দিয়ে ছবি আঁকা বা ডিজাইন তৈরি করা এখন এক নতুন শিল্পের দিকনির্দেশনা।
কিন্তু কিছু জিনিস কখনোই বদলায় না। সত্যিকারের শিল্পের প্রতি যে সৎ ও নির্ভীক মনোভাব লিওনার্দোর ছিল, তা আজও আদর্শ হয়ে আছে। সেই কারণেই আজকের আধুনিক যুগের একটি শক্তিশালী এআই ইমেজ জেনারেটরের নামকরণ করা হয়েছে এই মহান শিল্পীর নামেই—Lionardo AI। এটি তার প্রতি এক শ্রদ্ধার্ঘ, কারণ লিওনার্দো নিজেও প্রযুক্তি এবং সৃজনশীলতার সীমানা ভাঙার ক্ষেত্রে পথপ্রদর্শক ছিলেন।
যদিও এআই শিল্পের জগতে নতুন দিগন্ত খুলছে, তবে শিল্পীর সৃষ্টিশীলতা এবং সততার মূল বিষয় কখনো বদলাবে না। যেমন লিওনার্দো কখনো বাহ্যিক সৌন্দর্যের প্রলোভনে পড়েননি, তেমনি আধুনিক যুগের শিল্পী এবং প্রযুক্তিবিদদেরও সেই একই সাহসী মানসিকতা রাখতে হবে। প্রযুক্তি বদলাবে, মাধ্যম বদলাবে, কিন্তু শিল্পের আসল আত্মা, যা সত্যিকারের সৃষ্টিশীলতার উৎস, তা কখনো বদলাবে না।
#art #ethics #history #historyshorts #lionardodavinchi