|

পৃথিবীর ইতিহাসে জঘন্যতম কম্পিউটার ভাইরাস কোনটি?
শুরুতেই পৃথিবীর ইতিহাসের জঘন্যতম ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত একটি কম্পিউটারের দুইটি স্ক্রিনশট দেখি।


আপনি নিশ্চয়ই অবাক হচ্ছেন! এগুলোতো অপারেটিং সিস্টেম থেকে প্রাপ্ত ছবির স্ক্রিনশট যেখানে কম্পিউটারটির ভাইরাস আক্রান্ত হওয়ার কোন লক্ষণই নেই।
ম্যালওয়্যার যদি আপনার কম্পিউটারের তথ্য উপাত্ত টার্গেট করে থাকে তাহলে সে আপনাকে কম্পিউটারটি ব্যবহারে ন্যূনতম সমস্যা বা অসুবিধা করবে না।
আপনি নিশ্চিন্ত মনে আপনার কম্পিউটার ব্যবহার করে যাবেন আর ম্যালওয়্যারটি নীরবে নিভৃতে নজর রাখবে আপনার ব্যাংক একাউন্ট নম্বর, ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ড নম্বর, আপনার হিসাবের পিন ও পার্সওয়ার্ড বা ব্যক্তিগত তথ্য, ছবি, ভিডিও ইত্যাদির উপর।
জঘন্যতম ভাইরাস এর বৈশিষ্ট্য হচ্ছে সে আপনার কম্পিউটার বা মোবাইলে ভাইরাস হিসেবে লুকিয়ে পেছনের দরজা দিয়ে ঢুকবে না বরং ‘এন্টিভাইরাস’ এর রূপ নিয়ে বন্ধুবেশে আপনার জ্ঞাতসারেই মোটামুটি জামাই-আদরে আপনার কম্পিউটার বা মোবাইলে ঢুকবে।
ধরুন আপনি ইন্টারনেটে একটি নতুন ওয়েবসাইট ভিজিট করছেন এমন সময় আপনার স্ক্রিনে একটি বিজ্ঞাপন আসলো ‘আপনার কম্পিউটার বা মোবাইলটি ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয়ে থাকতে পারে’। তাই দয়া করে ‘মাইক্রোসফট সিকিউরিটি এন্টিভাইরাস’টি ডাউনলোড করে নিন।
একটি সেই বিজ্ঞাপনে ক্লিক করলেন, সেটা আপনাকে হুবহু মাইক্রোসফট এর থিমে সাজানো একটি সাইটে নিয়ে গেলো এবং সেই সাইট আপনার ডিভাইসের মডেল, নাম-ধাম এবং অপারেটিং সিস্টেম এর কিছু তথ্য শনাক্ত করতে সমর্থ হলো। এতে তার প্রতি আপনার আস্থা তৈরি হলো।
এবার সাইটটি আপনাকে এন্টিভাইরাসটি ডাউনলোড করতে বললো এবং সম্পূর্ণ ফ্রিতে।
এন্টিভাইরাস ডাউনলোড হলো আর আপনি তা ইনস্টল করে নিলেন। স্বাভাবিকভাবেই আপনার ডিভাইসের ‘এডমিন’ ইউজার ও পাসওয়ার্ড তার লাগবে। কেন? কারণ এন্টিভাইরাসটি চালু করতে হবে যে!
এবার সফটওয়্যারটি আপনার সামনে ১০ পাতার ‘এন্ড ইউজার লাইসেন্স এগ্রিমেন্ট’ হাজির করলো, যা আমরা কেউ জীবনে কোনোদিন পড়ে দেখি নি শুধু ‘আই এগ্রি’ বাটনে চাপ দিয়ে সামনে চলে যাই, তাই না?।
এবার এন্টিভাইরাস সফটওয়্যার আপনার পুরো ডিভাইস স্ক্যান করলো তারপর সার্টিফিকেট দিয়ে দিল আপনার ডিভাইস ঠিক আছে, আপনি সুরক্ষিত, সুতরাং নিশ্চিন্ত মনে ব্যবহার করে যান।
কিছুদিন গেল।
অন্য আরেকদিন আপনি কোন একটা সাইট থেকে একটা উষ্ণ ছবি ডাউনলোড করতে গেলেন অমনি এন্টিভাইরাস সফটওয়্যার আপনাকে সর্তকতা দিলো ‘আপনার ডিভাইস ভাইরাস আক্রান্ত হতে পারে’। উপস… এ যাত্রায় আপনি বেঁচে গেলেন!
মাসখানেক পরে এন্টিভাইরাস সফটওয়্যার আপনাকে বিজ্ঞপ্তি মাসিক মাত্র ১০ ডলারের বিনিময়ে আপনি এন্টিভাইরাসটির প্রো ভার্সন ডাউনলোড করুন এটি ভাইরাস ধ্বংস করবে।
________________________________________
এই গল্প আমাদের সবারই কম-বেশি চেনা।
এবার শুরু থেকে ঘটনা প্রবাহগুলোতে আরেকবার চোথ বুলিয়ে আসি।
প্রথমত বিজ্ঞাপনটি মিথ্যা বলেছিল। কোন বিজ্ঞাপনের সাধ্য নেই আমাদের কম্পিউটার বা মোবাইল ডিভাইসের ভাইরাস স্ক্যান করার। কোন বিজ্ঞাপন বলতে পারে না ‘আমার ডিভাইস ভাইরাসে আক্রান্ত’।
দ্বিতীয়ত এন্টিভাইরাস ডাউনলোডের জন্য নিয়ে যাওয়া সাইটটি ছিল ভূয়া। এটি একটি আসল সাইটের আদলে কপি-পেস্ট করে বানানো তৈরি নকল সাইট। আপনার ভিজিট করা একটি সাইটের পক্ষে উক্ত ডিভাইসের নাম, মডেল এবং অপারেটিং সিস্টেমের তথ্য জানানো কঠিন কিছু না।
আপনাকে ফ্রি এন্টিভাইরাস প্রদানের অফারটি ছিল আরেকটি শয়তানি, বিকাশের নাহিদের মতো কাস্টমার কেয়ার অফিসার সেজে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হাতিয়ে নেওয়া।
আপনার ডিভাইসের ‘এডমিন’ ইউজার ও পাসওয়ার্ড হাতে পেলে যে কারো পক্ষে আপনার সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করা সময়ের ব্যাপার মাত্র। আপনি কোন কোন সাইটে প্রবেশ করেন, কি কি দেখেন, কোথায় কেনাকাটা করেন, কি ডাউনলোড করেন, সব কিছুই পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব।
উঞ্চ ছবি ডাউনলোড করার সময় আপনাকে সতর্ক করে দেয়াটা ছিল তার ভালো সাজার প্রয়াশ মাত্র।
একটি ম্যালওয়্যার কাজ শুরু করার পূর্বে দীর্ঘদিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে পারে। আপনি হয়তো নাও জানতে পারেন যে এক যুগ আগে ছাত্রাবস্থায় ডাউনলোড করা কোন ম্যালওয়্যার হয়তো এখন এসে তার কাজ করছে। আপনাকে ব্ল্যাকমেইল করার জন্য বা আপনার তথ্য হাতানোর জন্য অপেক্ষা করাই তার ধর্ম। আপনার কোন একটা ফাইল নিজের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে টাকা দাবি করার জন্য সময় সে নিতেই পারে।
এই ম্যালওয়্যার নিজে নিজেই আরো কিছু ভাইরাস আমাদের ডিভাইসে নিয়ে আসতে পারে, ধরুন সফটওয়্যার ‘আপডেট’ দিলেন আর এই প্রক্রিয়ায় আপনার অজান্তে সে আরো ভাইরাস ডাউনলোড করার কাজ সেরে ফেললো।

________________________________________
ওয়ান্না-ক্রাই এমন এক ধরণের কম্পিউটার ভাইরাস যার বৈশিষ্ট্য উপরোক্ত বর্ণনার সাথে মিলবে।
ভদ্রবেশী ডাকাতের মতো আপনাকে ক্ষতিগ্রস্থ ফাইল বা তথ্য-উপাত্ত পুনরুদ্ধারের জন্য সাহায্য করার নামে লুট করে। আপনি হয়তো জানবেনই না যে ফাইলগুলো আপনি উদ্ধারের চেষ্টা করছেন সেগুলো এই সাহায্যকারীই নষ্ট বা ধ্বংস করে দিয়েছিল। আপনার কাছ থেকে সরাসরি চাঁদাবাজির মতো অর্থ না চেয়ে বরং সাহায্যের বিনিময়ে অর্থ আদায় করা। টাকার পরিমাণ শুরুতে সামান্য থাকে পরে ধীরে ধীরে বাড়তে থাকবে।
এই ভাইরাসটি ইমেইলে সংযুক্তি আকারে আমাদের ডিভাইসে প্রবেশ করে। দূর থেকে নিয়ন্ত্রণ করা যায় এমন এক্সিকিউটেবল প্রোগ্রাম ডকুমেন্ট ফাইলের মাধ্যমে আমাদের নিকট পাঠানো হয়।
এজাতীয় ভাইরাস থেকে বাঁচার উপায় হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ ফাইলগুলোর ব্যাক-আপ রাখা। কম্পিউটারের হার্ড ডিস্ক নিরাপদ নয় তাই কম্পিউটারের বাহিরে কোথাও ফাইলগুলো সংরক্ষণ করুন। হার্ড ডিস্ক থেকে ফাইল পুনরুদ্ধার ব্যয়বহুল এবং ক্ষেত্রবিশেষে অসম্ভব।
________________________________________
আরেকটি কেলেংকারি!
আপনি হয়তো কোন উষ্ণ সাইট ভিজিট করছেন এমন সময় আপনার উত্তেজনায় পানি ঢেলে দিয়ে একটি পপ-আপ আসলো। এই পপ-আপ গুলো থেকে আপনি যতই বাঁচতে চান, সম্ভব না। কারণ এজাতীয় সাইটে ঢুকলে সে আপনার ব্রাউজার সম্পর্কিত কিছু তথ্য হাতিয়ে নিবেই।
স্বত্ব: উক্ত লেখাটি Valerio Cietto নামের একজন হার্ডওয়্যার ডেভেলপার এর ব্লগ পোস্ট থেকে অনুবাদিত।
